সাইফুল ইসলাম সানি: সখীপুরে মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর শপথস্তম্ভের সামনে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘটনায় ফুঁসে উঠছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ও এলাকাবাসী। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক বহেড়াতৈলে অবস্থিত গণকবর ওই শপথস্তম্ভের সৌন্দর্য রক্ষায় মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রতিবাদের ঝড়।
শপথস্তম্ভের সামনে নির্মাণাধীন ভবন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা উপজেলার বহেড়াতৈলে পবিত্র কোরআন, গীতা ও বাইবেলসহ নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে দেশ স্বাধীনের শপথগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে ১৯৯৬ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম ওই শপথস্তম্ভটি নির্মাণ করেন। কিন্তু সম্প্রতি ওই স্তম্ভের সামনে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পাকা ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল। শপথস্তম্ভটির সৌন্দর্য নষ্ট করে ভবন নির্মাণে ক্ষুব্ধ হয় এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি হারুন আজাদ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নষ্ট করে সরকারি ভবন নির্মাণ মেনে নেওয়া যায়না। আমরা ওই ভূমি অফিসের ভবন অনত্র স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছি।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের আপত্তির মুখে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) আসমাউল হুসনা লিজা সাময়িকভাবে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী এসএম হাসান ইবনে মিজান শনিবার পুনরায় ভূমি অফিসের নির্মাণ কাজ চালু করেন। পরে ইউএনও আসমাউল হুসনা লিজা ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্বিতীয়বার নির্মাণকাজ বন্ধ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ শপথস্তম্ভের সামনে ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশানর (ভূমি) হা-মীম তাবাসসুম প্রভা এবং উপজেলা প্রকৌশলী হাসান ইবনে মিজান পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।
হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, ওই জায়গায় ভবন নির্মাণের বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আমাকে অবহিত করেননি। এ বিষয়ে আমাকে না জানিয়েই ওনি কাজ শুরু করেছেন।
অন্যদিকে উপজেলা প্রকৌশলী হাসান ইবনে মিজান সখীপুর বার্তাকে বলেন, ভূমি কর্মকর্তাকে জানিয়েই গত বুধবার ভবনের ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেছি। এসময় ভূমি অফিসের একজন প্রতিনিধি কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। পরে বৃহস্পতিবার নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে বর্তমানে কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরো যোগ করেন, এখানে এরআগে যে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড কর্মরত ছিলেন, মূলত তাঁরাই এ ভবনের স্থান নির্বাচন এবং মাটির নমুনা পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাবটিই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাশ হয়ে এসেছে। আমি বর্তমান উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে জানিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, ২০১৭ সালে ওই ভবনের সয়েল টেস্ট ও ভূমি নির্বাচন করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জায়গাটি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাগণ আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এদিকে উপজেলা প্রকৌশলী হঠাৎ করেই আমাকে কিছু না জানিয়ে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। এজন্যে উপজেলা প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের আপত্তির কারণে কাজটিও বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ শপথস্তম্ভটি উদ্বোধন করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ ২৪ বছরের স্তম্ভটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতি বিজড়িত স্তম্ভটি সংস্কারসহ এর নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণেরও দাবি জানিয়েছেন।
-এসবি/সানি
Leave a Reply