আগে বসন্তকালে বসন্ত রোগের ভয়ে সকলেই খুব সাবধানে থাকতেন। তবে এখন আবহাওয়া অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। বর্ষা এখন বেশ কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে বদলে যাওয়া আবহাওয়ায় এখন বছরের যে কোনও সময়েই চিকেন পক্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অনেকটা কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের মত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা থুতুর সঙ্গে ভাইরাস ছড়ায়। এমনকি, রোগীর সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে। সম্প্রতি আমাদের সখীপুরেও চিকেন পক্স বা গুটি বসন্তের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই এ সম্পর্কে বিভিন্ন অনলাইন থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন সখীপুর বার্তা’র প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সানি। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কী কী সাবধানতা অবলম্বন করলে চিকেন পক্স থেকে দূরে থাকা সম্ভব…
চিকেন পক্স ‘ভ্যারিসেলা ভাইরাস’-এর কারণে হওয়া একটি ছোঁয়াচে রোগ। সাধারণত চিকেন পক্সে আক্রান্ত হওয়ার ১০ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। চিকেন পক্স হলে সারা শরীরে ছোট ছোট লালচে ফোসকার মতো দেখা যায়। এর সঙ্গেই থাকে মাথা ব্যথা আর জ্বর। রোগীর শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। চিকেন পক্সের সব চেয়ে খারাপ দিক হল এর লালচে ফোসকার সঙ্গে মারাত্মক চুলকানি। ত্বকে অস্বস্তির জেরে চুলকোতে গিয়ে এই লালচে ফোসকা ফেটে গেলে তা থেকে আরও বেশি মাত্রায় ফুসকুড়ির মতো উঠতে শুরু করে। তবে সতর্ক থাকলে তেমন কোনও চিকিৎসা ছাড়াই সেরে ওঠা সম্ভব। কিন্তু ত্বকের দাগ থেকে যেতে পারে দীর্ঘদিন। শিশুর শরীরে দ্রুত জটিলতা দেখা দেয় বিধায় প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রোগটি কীভাবে ছড়ায়:
এটি খুব ছোঁয়াচে রোগ। এই কারণে খুব সহজে এবং দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ মানুষের দেহে তা ছড়িয়ে পরে। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা থুতুর সঙ্গে ভাইরাস ছড়ায়। এমনকি, রোগীর সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে। তা ছাড়া, ফোস্কার মধ্যে যে রস থাকে তার মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। ওই রস সুস্থ ব্যক্তির শরীরে লাগলে রোগ হতে পারে। তবে ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। শরীরে ঢোকার ১৪-২১ দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে।
খাবারের ব্যাপারে সাবধানতা:
১) চর্বি যুক্ত মাংস ও ফুল-ফ্যাট দুধ (স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার) এড়িয়ে চলাই ভাল। এই সব খাবারে থাকা ফ্যাট ভ্যারিসেলা ভাইরাসের সংক্রমণের গতিকে বাড়িয়ে দেয়। তাই এই সময় এই ধরণের চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল।
২) চকোলেট, বাদাম বা বীজ জাতিয় যে কোনও খাবার এই সময় এড়িয়ে চলাই ভাল। কারণ, এই সব খাবারে ‘আরজিনিন’ নামের একটি এমাইনো অ্যাসিড রয়েছে যা চিকেন পক্সের ভ্যারিসেলা ভাইরাসের আগ্রাসন, সংক্রমণের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
৩) দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করাবেন। এ সময়ে রোগীকে অনেক পুষ্টিকর খাবার দেওয়া প্রয়োজন হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে দেখা যায় খাবারের ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ মানার প্রথা রয়েছে, যা বিজ্ঞানসম্মত তো নয়ই, বরং অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। এমনকি, কুসংস্কারও বলা যেতে পারে। এই সময় রোগীর শরীরে দুর্বলতা তৈরি হয়। তাই রোগীকে উচ্চ প্রাণীজ প্রোটিন সম্বৃদ্ধ খাবার দেওয়া উচিত। বিশেষ করে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি প্রাণীজ প্রোটিন জাতীয় খাবার দিতে হয়। তবে অবশ্যই তা সহজপাচ্য হতে হবে।
ফাইল ফটো
চিকিৎসা কী: এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হলো, ফুসকুড়ি না শুকানো পর্যন্ত রোগীকে আলাদা করে রাখা এবং উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে যদি রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে, তাহলে ভাইরাসজনিত রোগের কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না।
চিকেন পক্স হলে কী করণীয়:
যতটুকু পারা যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে। বসন্ত প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। কারও একবার বসন্ত হয়ে গেলে আর টিকার প্রয়োজন নেই।
১) ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করবেন না। হালকা গরম পানিতে গোসল করুন। সব চেয়ে ভাল হয় যদি নিম পাতা সেদ্ধ জলতে গোসল করতে পারেন।
২) সাবান জল দিয়ে পক্স ধুতে পারবেন। তবে ভুলেও গা ঘষতে যাবেন না।
৩) এক বালতি হালকা গরম জলেতে ১ কাপ ওটমিল পাউডার ভিজিয়ে রেখে তা দিয়ে গোসল করে নিন। এতে চুলকানি অনেকটাই কমবে। ওটমিলে বিটা গ্লুকোন ও অ্যাভেনানথ্রামাইড রয়েছে যা চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। চাইলে বেকিং সোডাও ব্যবহার করতে পারেন।
৪) গোসল শেষে তোয়ালে বেশী চেপে গা মুছতে যাবেন না। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক ভাবেই শরীর শুকিয়ে নিন।
৫) চুলকানি কমাতে ওলিভ অয়েল বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করুন। উপকার পাবেন।
–এসবি/অনলাইন ডেস্ক
Leave a Reply