নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী বছরের মার্চ থেকে ধাপে ধাপে শুরু হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন। গত নির্বাচনের মতো এবারও কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ইউপির ভোট। স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউপির নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে তফসিল ঘোষণার করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সব ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত নির্বাচনের মতো আসন্ন ইউপির ভোটও হবে দলীয় প্রতীকে। চেয়ারম্যান বা মেম্বার প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক নয়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় চাউর হয়েছে যে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ক্ষেত্রে এইচএসসি এবং মেম্বার প্রার্থীর ক্ষেত্রে এসএসসি পাশ হতে হবে। এটিকে স্রেফ গুজব বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এটি নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে। এ ধরনের কোনো উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়নি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য সংসদ সদস্যদের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না। সেখানে ইউপিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা সংবিধানবিরোধীও।
ইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ মার্চ শুরু হয়ে কয়েক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয় ঐ বছরের ৪ জুন। স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯-এর ২৯ (৩)-এ বলা আছে, ‘পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ঐ পরিষদের জন্য পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ হইতে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।’ অর্থাৎ আগামী বছরের ২১ মার্চের আগেই ইউপি নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। চলতি বছরের ২১ অক্টোবর থেকে ইউপি নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হবে। করোনার কারণে স্থগিত এবং অপসারণ, পদত্যাগ, মৃত্যুও মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে নির্বাচন উপযোগী প্রায় দুই শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আসছে অক্টোবর থেকেই শুরু হবে। করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব নির্বাচন হবে। এসব ইউপিতে আগামী মাসে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ইসির একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা জানিয়ছেন, ২০১৬ সালে কয়েক ধাপে ইউপি নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছিল। এবারও একইভাবে ইউপির ভোট সম্পন্ন করা হবে। ৪ হাজার ৫৭১টি ইউপির মধ্যে ৪ হাজার ১০০ ইউপিতে ভোট করা যাবে। ২০০ ইউপিতে মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচন আটকে আছে।
এদিকে নির্বাচনের বাকি আছে ৬ মাস। এই নির্বাচন নিয়ে যেমন গ্রাম-গঞ্জে উচ্ছ্বাস রয়েছে তেমনি আছে শঙ্কা আর উৎকণ্ঠাও। কারণ সর্বশেষ ভোটে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবু সবকিছু উপেক্ষা করে এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত সদস্য ও সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীরা। নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ একাধিক গরু জবাই করে বিলি করেছেন এলাকার ভোটারদের মধ্যে। নির্বাচন সামনে রেখে বাড়ি, পাড়া-মহল্লা, হাটবাজার ও রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো এখন প্রায় সরগরম।
দেশের অন্য এলাকার মতো সখীপুর উপজেলাতেও ইউপি নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ আগামী বছরের মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। বাকি দুটি ইউপিতে আরও এক বছর পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। যে ৬টি ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ আগামী বছরের মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে সেগুলো হচ্ছে-১ নং কাকড়াজান, ২নং বহেড়াতৈল, ৪নং যাদবপুর, ৫ নং হাতীবান্ধা, ৬ নং কালিয়া ও ৮ নং বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। ইতোমধ্যে এই ৬টি ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত সদস্য ও সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীরা গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। আর ভোটাররাও বর্তমান জনপ্রতিনিধি ও সম্ভাব্য
প্রার্থীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। ১ নং কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও স্বতন্ত্র সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে-তারা হচ্ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম বিদ্যুৎ (আ.লীগ), সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল হক পান্না (আ.লীগ) ও শাহজাহান সাজু (বিএনপি), দুলাল হোসেন দুলাল (আ.লীগ), মহানন্দপুর বিজয় স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শামসুল হক বিএবিএড (আ.লী), অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা একেএম রাশেদুল হক মুক্তার (আ.লীগ) সৈয়দ আবদুল মালেক ওরফে শুকু মেলেটারি (আ.লীগ), ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন (আ.লীগ), ফরিদুজ্জামান ফরিদ (আ.লীগ)।
২নং বহেড়াতৈল ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে-তারা হচ্ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম ফেরদৌস (আ.লীগ), উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াদুদ হোসেন (আ.লীগ), নজরুল ইসলাম নবু (আ.লীগ), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মঞ্জু (আ.লীগ), সাধারণ সম্পাদক সোহেল সরকার (আ.লীগ), হুমায়ুন কবীর (বিএনপি) কামরুল হাসান (কৃ.শ্র.জনতা লীগ)।
৪নং যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে-তারা হচ্ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম আতিকুর রহমান আতোয়ার (আ.লীগ), সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুর রহমান বাবুল (আ.লীগ), হাফিজুর রহমান চৌধুরী পলাশ (আ.লীগ), উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক মীর্জা রেজাউল করিম (আ.লীগ)। ৫ নং হাতীবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে-তারা হচ্ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন (আ.লীগ), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবু নরেশ চন্দ্র সরকার (আ.লীগ), সাধারণ সম্পাদক শাজাহান খান রবিন (আ.লীগ), জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক রনি আহমেদ (আ.লীগ), সাঈদুল ইসলাম (আ.লীগ), সাবেক ব্যাংকার আনোয়ার হোসেন (আ.লীগ), ব্যবসায়ী শামসুল হক (আ.লীগ), যুবলীগ নেতা রুবেল পারভেজ (আ.লীগ), আবদুস ছামাদ খান (বিএনপি), সোহেল রানা (বিএনপি), হুমায়ুন খান (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ) ও জসীম উদ্দিন (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ)। ৬ নং কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে-তারা হচ্ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম কামরুল হাসান (আ.লীগ), উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজহারুল ইসলাম (আ.লীগ), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সানস্টার স্কুল এন্ড করেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাড়াসিয়া-বাশারচালা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুছ মাস্টার (আ.লীগ), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল কুদ্দুছ মাখন (আ.লীগ), ইউসুফ আলী ভূইয়া (আ.লীগ), উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সাথী (আ.লীগ), ছাত্রলীগ নেতা আয়নাল হক (আ.লীগ), সাবেক চেয়ারম্যান জামাল মিয়া (আ.লীগ), মোতালেব হোসেন শিকদার ডিলার (আ.লীগ), কফিল উদ্দিন বিএসসি (আ.লীগ), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস ছবুর মিয়া (আ.লীগ), সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুল হক (আ.লীগ), উপজেলা বিএনপির সদস্য ও ইউপি সদস্য মো. শামসুল হক (বিএনপি) এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এসএম শামসুল আলম (বিএনপি)।
৮ নং বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে-তারা হচ্ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া সেলিম (আ.লীগ), সাইফুল ইসলাম শিবলু (আ.লীগ), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম (আ.লীগ), নিরাঞ্জন বিশ্বাস (আ.লীগ), জুয়েল আল-মামুন (আ.লীগ) ও বজলুর রহমান ভূইয়া (বিএনপি)।
Leave a Reply