বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৩
Homeসখীপুরনিজ প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হাছিনা

নিজ প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হাছিনা

- Advertisement -spot_img

13336170_1692992994300161_1565373433_n

সাজ্জাত লতিফ : নাম হাছিনা। বাড়ি সখীপুর উপজেলার আড়াইপাড়া গ্রামে। বাড়িতে বসেই আয় করছে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা। বেকার স্বামী বিল্লাল হোসেনকে পার্শ্ববর্তী বাজারে দোকান দিয়ে দিয়েছেন। নিজের উপার্জিত টাকা দিয়েই। শুধু তাই নয় জের সন্তানদের পড়াশুনার খরচও দিয়ে যাচ্ছেন। যা গ্রামে বসে কোন নারীর পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। নিজে কাজ শিখে ঝুকি নিয়ে স্বামীর বাড়িতে দু-চালা টিনের ঘর দিয়ে শুরু করেন পরচুলা তৈরির কাজ। প্রথমে এলাকার উৎসাহী দু-একজন নারীকে কাজ শিখান তিনি। কাজ ধরে উঠলে তাদের হাতে টাকা ধরিয়ে দিতে দেখে আশপাশের অসহায়, গরিব ও স্বামী পরিত্যাক্তা নারীরা উৎসাহী হয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। ১৫ বছর ধরে ৫/৬ টি গ্রামের ২৫০ জন নারী হাছিনার নিকট পরচুলা বানানোর কাজ শিখে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
হাছিনারা চার বোন। ভাই নেই। হাছিনাই বড়। এজন্য সংসারের দায়িত্ব অনেকটা তার উপরই আসে। কারণ বাবা একদম গরীব মানুষ। অন্যের বাড়ি দিন মজুরি করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার কোন ভাবেই চলতে চায় না। কাজেই হাছিনা আর কাল বিলম্ভ না করে নেমে পড়েন আয় রোজগারের দিকে। মামাতো বোন গার্মেন্টেসে ঢাকা চাকরি করে মাসে মাসে মা-বাবার নিকট টাকা পাঠায়। তাকে দেখে উৎসাহী হয়ে নিজের ঢাকা যাবার ইচ্ছা পোষণ করেন হাছিনা। পরে তিনি ঢাকা যান কিন্তু বয়স কম থাকায় কোন গার্মেন্টস্ মালিকই তাকে চাকরি দিতে রাজি হননি। হতাশ হয়ে পড়েন হাছিনা। এক পর্যায়ে সন্ধান পান পরচুলা ফ্যাক্টরিতে লোক নেওয়া হবে। সেখানে ৬০০ টাকা বেতনে চাকরি হয়ে যায় তাঁর। হাছিনা কাজ করতে থাকে নিরলসভাবে। তার কাজের দক্ষতা দেখে কোরিয়ার এক নারী তাকে পছন্দ করে। তাকে কোরিয়া নেওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠায়। হাছিনার ভাগ্য খুলে যায়। ৩০ হাজার টাকা আত্মীয় স্বজনের নিকট থেকে ধার-দেনা করে বিদেশ পাড়ি জমান হাছিনা। সেখানে ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে ভাগ্য ফিরে যায় হাছিনার। মা-বাবাকে ঘরবাড়ি তৈরি কওে দেন হাছিনা। বিদেশ থাকা কালীন সময়ে হাছিনা চিন্তা করেছিলেন দেশে ফিরে একটি পরচুলা তৈরির কারখানা করবেন।
১৯৯৭ সালে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে ঢাকার একটা অফিসের সাথে যোগাযোগ করে পরচুলা তৈরির কারখানা করেন। হাছিনার বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার নয়নপুর গ্রামে। সেখানে তার ছোট দুই বোন নাজমা ও রুমাকে কাজ শিখিয়ে কারখানা করে দেন। ২০০০ সালে হাছিনার বিয়ে হয় সখীপুর উপজেলার আড়াইপাড়া গ্রামে। এ সুবাদে পুরোদমে তার কারখানায় পরচুলা তৈরির কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তার কারখানায় গেলে ৫০ থেকে ৬০ জন নারীকে একত্রে পরচুলা তৈরির কাজ করতে দেখা যায়। হাছিনার দুই মেয়ে জান্নাত ও ফারিয়া এবং স্বামী সংসার নিয়ে অত্যন্ত সুখে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
Must Read
- Advertisement -spot_img
আরও সংবাদ
- Advertisement -spot_img