সোমবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
Homeশিক্ষাধর্মীয় শিক্ষাদানে অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান নলুয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা

ধর্মীয় শিক্ষাদানে অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান নলুয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা

- Advertisement -spot_img

Nalua Sinior Madrasha Pic

  • এম সাইফুল ইসলাম শাফলু: নলুয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা। সখীপুর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে দেওদিঘী বাজার হয়ে পূর্বে  ইটবিছানো পথ ধরে সামনেই শহরের গতিময়তা আর প্রাণচঞ্চলতা পরিহার করে ছায়া সুনিবিড় মনোরম পরিবেশে বহুরিয়া চতলবাইদ মৌজায় প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। চারদিকে নিরাপত্তার সীমানা  প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ঐতিহ্যবাহী  এ প্রতিষ্ঠান।  দেশ স্বাধীনেরও অনেক আগে ১৯৫৮ সালে ৪ একর ৭১ শতাংশ জমির মাদ্রাসাটি গড়ে ওঠেছে। টাঙ্গাইলের হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। ধর্মীয় শিক্ষার মানকে অগ্রসর করতে এলাকার  বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী হাজী হাকিম উদ্দিন, মাইন উদ্দিন মোল্লা এবং হাজী সলিম উদ্দিনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। এ সময় তাদের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, রাজা মাহমুদ ভূইয়া, হাজী জয়েন উদ্দিন দেওয়ান, আন্তাজ আলী দেওয়ান, হুরমুজ আলী চেয়ারম্যান, আবদুল হামিদ মিয়া, নওশের আলী মোল্লা, তহিজ উদ্দিন মিয়া, রহিজ উদ্দিন মিয়া, হাজী খন্দকার চাঁন মাহমুদ, হাজী আবদুল হক, চান মাহমুদ ডিলার, ঘেচুয়ার মুক্তার আলী মিয়া, হাজী মোহাব্বত আলী, ডিএম সালাহ উদ্দিন সামান, মোকাদ্দছ আলী মোল্লা, কাজী আছর উদ্দিন, দারগালী মেম্বার, দেওয়ান মোবারক হোসেন, ডা. জবেদ আলী, কাজীম উদ্দিন মাস্টার, বরকত আলী সরকার, আবদুর রশিদ মাস্টার, ইসমাইল দেওয়ান, হাজী ফালু খান, সন্দেশ খান, জামাল উদ্দিন খান, ঘঠু দেওয়ান, জবেদ আলী সিকদার, ফজল মিয়া এবং কালু দেওয়ানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৮ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা হলেও প্রাথমিক স্বীকৃতি পায় ১৯৮৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর। দাখিল মাদ্রাসা হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১ জানুয়ারি ১৯৭৪ সাল এবং আলিম মাদ্রাসা হিসেবে ১ জুলাই ১৯৮৬ সাল। বর্তমানে এ মাদ্রাসাতে ৪০২ জন ছাত্র/ছাত্রী নিয়মিত অধ্যয়ন করছে। এর পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই এবতেদায়ী, জেডিসি, দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সফলতার সঙ্গে ফলাফল বয়ে আনছে। ২০১৫ সালে মাদরাসায় এবতেদায়ীতে ২৪ জন, জেডিসিতে ২৯ জন পরীক্ষা দিয়ে শতভাগ পাশ করে। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৯ জন পাশ করে ২৬ জন, আলিম পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৮ জন পাশ করে ২৩ জন। এ ছাড়া ২০১৬ সালে এবতেদায়ীতে ২৬জন, জেডিসিতে ৩৭ জন, দাখিলে ২০ জন এবং আলিমে ২২ জন পরীক্ষা দিয়েও শতভাগ পাশ করেন। ২০১৭ সালে দাখিল পরীক্ষায় ২০ জন অংশ নিয়েছে এবং আলিম পরীক্ষা দিতে ২৩ জন তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী ওই ৪০২ জন শিক্ষার্থীকে দক্ষতার সহিত শিক্ষাদানে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এছাড়াও প্রশিক্ষিত শিক্ষক দ্বারা নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ও এসেম্বলী ক্লাশ নেওয়া হয়। এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ধর্মীয় শিক্ষার নানাদিক অত্যন্ত যতেœর সহিত হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। প্রতি বছরই এ মাদরাসার পক্ষ থেকে বাৎসরিক ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় দেশের  বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো ¯্রােতাদের মাঝে বরেণ্য বক্তারা তাতে ওয়াজ ফরমান। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জমি দিয়ে যারা সহযোগিতা করেছেন তারা হলেন,  হাজী জয়েন উদ্দিন দেওয়ান ১ একর ৫৩ শতাংশ, হাজী হাকিম উদ্দিন ও ফুলবাহার মিলে ৬৭ শতাংশ, মাইন উদ্দিন মোল্লা ১৪ শতাংশ, হাজী হাকিম মোল্লা ২৮ শতাংশ, আফাজ উদ্দিন ৭ শতাংশ, রেফাজ উদ্দিন ১৪ শতাংশ, হাজী ফালু খান ১৪ শতাংশ, মুন্সী সাহেব আলী ২৪ শতাংশ, মোকাদ্দছ মোল্লা ৫ শতাংশ, আরফান মোল্লা ১২ শতাংশ, নূরবকস্ ১২ শতাংশ, হাজী খন্দকার চাঁন মাহমুদ ১৪ শতাংশ, হাজী আঃ হাকিম মোল্লা ৭ শতাংশ, কাজীম উদ্দিন মাস্টার ১০ শতাংশ, আন্তাজ আলী দেওয়ান ১০ শতাংশ, তমছের আলী মোল্লা ৫ শতাংশ, আঃ হামিদ মিয়া ১৪ শতাংশ, হাছেন আলী ১৪ শতাংশ, মোক্তার আলী ২৮ শতাংশ, ইব্রাহিম মিয়া ৭ শতাংশ এবং আছাত্তন নেছা ১২ শতাংশ। সভাপতি হিসেবে যারা গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন তারা হলেন, হাজী খন্দকার চাঁন মাহমুদ এবং ২০১৬ সালের ১৪ জুন থেকে ওই মাদরাসারই কৃতী ছাত্র মো. বিল্লাল হোসেন অত্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে  অদ্যবধি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। মাদ্রাসাটি নলুয়ারতো বটেই সমগ্র দেশের জন্য অহংকার বয়ে এনেছেন। এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানই ধর্মীয় শিক্ষা দেবে অনাদীকাল ধরে। পৃথিবী যতদিন থাকবে প্রতিষ্ঠানটি বেঁচে থাকবেন তাঁর শিক্ষার মধ্যে, কর্মই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে এ সোনার বাংলায়। প্রতিষ্ঠাতা সুপার  হিসেবে মো. সাখাওয়াত হোসেন ১ জানুয়ারি ১৯৫৮ সাল থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৫, মো.আজহারুল ইসলাম ১ জানুয়ারি ১৯৭৬ সাল থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৭, মো. শামছুল হক ১ জানুয়ারি ১৯৭৮ থেকে ৩১ অক্টোবর ১৯৯১ এবং অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান ১ নভেম্বর ১৯৮৬ সাল থেকে, ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯১, মো. আসাদুজ্জামান মিয়া ৩ আগস্ট ১৯৯২ থেকে ৩০ জুন ১৯৯৫, মো. আনোয়ার হোসেন ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ সাল থেকে ১৬ জুলাই ২০০১ সাল এবং সর্বশেষ মো. আবুল কাশেম মিয়া ১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সাল থেকে অদ্যবধি এ প্রতিষ্ঠানে সততা ও দক্ষতার সাথে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ইতোমধ্যে সহকারী মৌলভী শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন (২০০৯), সহকারী শিক্ষক গণিত মো. আফাজ উদ্দিন (২০১৬), সহকারী শিক্ষক সিদ্দিক হোসেন (২০০০), সহকারী মৌলভী শিক্ষক মো. খোরশেদ আলম (২০০১) এবং প্রতিষ্ঠাতা সুপার সাখাওয়াত হোসেন মাওলানা মৃত্যু বরণ করেছেন।
    প্রতিষ্ঠানটিতে সুন্দর শিক্ষার পরিবেশ বিরাজমান থাকায় এখানে এরই মধ্যে অনেক সুধী জনের জন্ম হয়েছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের অদ্বিতীয় কণ্ঠশিল্পী আবু বকর সিদ্দিক, দেশ বরেণ্য গীতিকার ও সুরকার বেলাল খান, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডিএম শরীফুল ইসলাম শফী, সরকারি মুজিব কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান মিয়া, এডভোকেট সোয়াইব মিয়া, প্রতিমাবংকী ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী আবদুল মান্নান, দৈনিক যুগান্তরের সখীপুর প্রতিনিধি ও নিউজ টাঙ্গাইলের সম্পাদক এম সাইফুল ইসলাম শাফলু, বর্তমান প্রতিষ্ঠানের সুযোগ্য সভাপতি মো. বিল্লাল হোসেন, যাদবপুর ইউনিয়ন আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কেএম হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সস্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম মোল্লা, ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ফিরুজ আল মামুন, বড়চওনা  উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মির্জা আনোয়ার, কালিদাস পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মির্জা আতোয়ার রহমান, কামালিয়াচালা ফাজিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক হিসেবে রয়েছেন মো. সিদ্দিক হোসেন, বেলায়েত হোসেন, শামসুল আলম, মো. শফিকুল ইসলাম, হতেয়া ডিএস দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মাহবুবুর রহমান, মাদরাসার অফিস সহকারী দেওয়ান মাসুদুল হাসান, কারী শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম, জুনিয়র মৌলভী মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কেন্দ্রিয় খতিব মাওলানা আবদুল আজিজ, ইউরেকা শিক্ষা পরিবারের পরিচালক মনিরুজ্জামান খান, সান একাডেমির পরিচালক হুমায়ন কবির, বোয়ালী সবুজ বাংলা বালিকা  দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার  মাওলানা শওকত আলী, বেড়বাড়ী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী আবদুল মালেক, মামুন মোল্লা, ওয়ালটন কর্মকর্তা শামীম আল মামুন, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. আলমগীর হোসেন খান প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
    সখীপুর উপজেলার মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে নলুয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। আপামর মানুষের দুঃখ কষ্ট নিরারণ করে মুখে হাসি ফুটিয়ে তাদের স্বাধীন চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটাতে ফলাফলে নলুয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা একটি নাম একটি মডেল। শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশানুরুপ ফলাফলে উপজেলায় একটি গৌরবময় এবং সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সর্বসাধারণের শিক্ষার সুযোগ করে দিতে মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
    মাদ্রাসার বেশকিছু সমস্যা তুলে ধরে অধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম ‘সখীপুর বার্তা’কে বলেন, শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষ ও আসবাবপত্র সংকট রয়েছে। একতলা পাকা ভবনটি দ্বিতলা করা এবং টিনসেট ভবনগুলো পাকা ভবন করা প্রয়োজন। শিক্ষার মানোন্নয়নে মাদ্রাসার শূণ্যপদে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
Must Read
- Advertisement -spot_img
আরও সংবাদ
- Advertisement -spot_img