Homeকৃষিসখীপুরে ফুঁসে উঠছেন পোল্ট্রি খামারীরা
সখীপুরে ফুঁসে উঠছেন পোল্ট্রি খামারীরা
- Advertisement -

- মামুন হায়দার: নিম্নমানের ও ভেজাল খাদ্য, নিন্মমানের ও অনুমোদনহীন এবং ভেজাল ওষুধ, একদিন বয়সী লেয়ার ও ব্রয়লার বাচ্চা কেনা, ডিম ও মুরগী বিক্রিতে নানা সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ায় আন্দোলনে নামছেন খামারীরা। অনুসন্ধ্যানে খামারীদের সমস্যা, সম্ভাবনাসহ এ শিল্প খাতের নানাদিকের খোঁজ নিয়ে জানাযায়, টাঙ্গাইলের পূর্বাঞ্চল সখীপুর, ঘাটাইল, ধনবাড়ি, ভালুকা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলাসহ আশ পাশের কয়েকটি উপজেলায় গড়ে উঠেছে ছোট, বড় ও মাঝারি প্রায় ৩০ হাজার পোল্ট্রি খামার। বাংলাদেশের মধ্যে এ অঞ্চলটি এখন পোল্ট্রি শিল্পের প্রধান অঞ্চল হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। ডিম ও মাংসের মুরগী কিনে নিতে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের আড়তদার ব্যবসায়ীদের প্রতিনিই শত শত পরিবহন ট্রাক ঢুকছে। বাংলাদেশের চাহিদার সিংহভাগ ডিম ও মাংসের যোগান দিচ্ছে এ অঞ্চলটি থেকে। কিন্তু ডিম ও মাংসের বাজারজাত ব্যবস্থায় প্রান্তিক খামারীরা মধ্যসত্ত্বভোগী এবং সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ায় তাঁরা তাঁেদর ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একদিকে খাদ্যে ও ওষুধে ভেজালে তুলনামূলকভাবে উৎপাদন কম, অন্যদিকে বেশি দামে একদিন বয়সী লেয়ার ও ব্রয়লার বাচ্চা কেনা, ডিম ও মুরগী বিক্রিতে নানা সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে প্রান্তিক খামারীদের এখন ত্রাহি অব¯’া। জানা যায়, ডিলার ও হ্যাচারী মালিকের কারসাজিতে একদিন বয়সী লেয়ার বাচ্চা সরকারি মূল্য ৫০/৫৫ টাকার স্থলে সময় ভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে খামারীকে। একইভাবে একদিন বয়সী ব্রয়লার বাচ্চা সরকারি মূল্য ৫০/৫৫ টাকার স্থলে সময় ভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে খামারীকে। যা প্রান্তিক খামারীদের কাছে এটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এরপর খাদ্য ডিলারদের প্রলোভনে নামে – বেনামের ভেজাল খাদ্য খাওয়ানো শুরু করেন খামারীরা। এরপর শুরু হয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে ‘ভেজালের ভিড়ে খাটিমানের নিশ্চয়তা’ নিয়ে নাম স্বর্বস্ব নানা ওষুধ কোম্পানির নি¤œমানের ও ভেজাল ওষুধ খাওয়ানো। পোল্ট্রি খামারীকে ঘিরে বিভিন্ন বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ম নীতিহীনভাবে অসংখ্য ওষুধের দোকান গড়ে ওঠেছে। এদের অধিকাংশ ওষুধের দোকানের নেই ড্রাগ লাইসেন্স, ফার্মাসিস্ট। ওষুধ ব্যবসায়ী ও খাদ্য ডিলাররাই এখন খামারীদের কাছে হয়ে ওঠেছে পরামর্শক আর চিকিৎসক। প্রাণি সম্পদ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধ ব্যবসায়ী ও খাদ্য ডিলারদের নানামুখী প্রলোভনে খামারীরা তাদের কাছে তেমন একটা আসেন না। কারন হিসেবে জানতে চাইলে বলেন, ওইসব ওষুধ ব্যাবসায়ী মুরগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োগের মাত্রা এবং চিকিৎসার সঠিক ধরন না জেনেই উচ্চ মাত্রার যত্রতত্র ‘এ্যন্টিবায়োটিক’ প্রয়োগ করাচ্ছেন। যা খামারীদের জন্য ক্ষতিকারক। এতে হিতে বিপরীত হচ্ছে। উৎপাদন দিনদিন কমে আসছে। এসব ‘এ্যন্টিবায়োটিক’র ক্রিয়া মাত্রা ২০ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত অটুট থাকে। যা ডিম ও মুরগীর মাংসে বিদ্যমান থাকায় মানুষে শরীরে ক্ষতির আশংকা থাকে। আমাদের কাছে খামারীরা আসলে খামার পরিদর্শন করে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি এবং মানসম্মত কোম্পানীর ওষুধ প্রেসকাইপ করি। এক্ষেত্রে দেখা যায় ওই ওষুধগুলোতেও আবার বেশি মুনাফার আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বিকল্প হিসেবে নিন্মমানের কোম্পানির ওষুধ ধরিয়ে দেন খামারীদের। এতে তাদের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মুনাফা বেশি হয়। একইভাবে নিন্মমানের ও ভেজাল খাদ্যের ব্যাপারেও খাদ্য ডিলাররা একই পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী ও খাদ্য ডিলার বলেন, বিভিন্ন সময় খামারীরা বাকিতে ওষুধ এবং খাদ্য নিয়ে থাকেন। যেহেতু পোল্ট্রি খামার একটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা এক্ষেত্রে আমরাও কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনা। তাছাড়া ভালো মানের কোম্পানির ওষুধে লাভ খুবই কম। উপজেলার আমতৈল গ্রামের পোল্ট্রি খামারী কবির হোসেন বলেন, সাংবাদিকরা যদি এ বিষয়গুলো তুলে ধরেন অবশ্যই খামারীরা লাভবান হবেন এবং তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। স্থানীয় প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, শুধু সখীপুর উপজেলাতেই ৬শ’ ৬৯টি নিবন্ধনকৃত পোল্ট্রি খামার রয়েছে। বেসরকারি হিসেবে এ উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার খামার রয়েছে। পোল্ট্রি শিল্প’ মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম খান ও ব্রয়লার মুরগী খামার সমিতির সভাপতি শাহাদত শাহজাহান বলেন, নানা সিন্ডিকেট ও ভেজালে বেশ কিছু খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ডিলার ও হ্যাচারী মালিকের কারসাজিতে একদিন বয়সী লেয়ার বাচ্চা সরকারি মূল্য ৫০/৫৫ টাকার স্থলে সময় ভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে খামারীকে। একইভাবে একদিন বয়সী ব্রয়লার বাচ্চা সরকারি মূল্য ৫০/৫৫ টাকার স্থলে সময় ভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে খামারীকে। এ বিষয়টি সরকারের বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন এবং খামারীদের সচেতনতার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার প্রতি জোর দেওয়া উচিৎ বলে জানান তারা।
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -