বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৩
Homeজাতীয়২৬ মার্চ শৃঙ্খলমুক্তির দিন

২৬ মার্চ শৃঙ্খলমুক্তির দিন

- Advertisement -spot_img

sar.13

  • মামুন হায়দার : ২৬ শে মার্চ বাঙালির শৃঙ্খলমুক্তির দিন। গৌরবের দিন। ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। সূচনা করেছিল সশস্ত্র সংগ্রামের। একাত্তরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তিনি বলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। সেই থেকে শুরু। এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, ধ্বংস ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরণপণ লড়াইয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। বরাবরের মতো গোটা জাতি আজ শোক ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অবনতচিত্তে স্মরণ করছে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা আর বাংলার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরুর পর মধ্যরাতে, অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে দেওয়া ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে দেশবাসীকে নির্দেশ দেন। তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে সে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের সর্বত্র। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় সেদিনই ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ। প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নান বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পাঠ করেন। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপঅধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান (পরবর্তীকালে সেনা প্রধান ও রাষ্ট্রপতি) বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন। তাই এই ঘোষণা দেশের জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনীর একাত্মতার বার্তা হিসেবে দেশবাসীকে উজ্জীবিত করে। ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার নিভৃত এক আমবাগানে শপথ নেয় নবগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত এই সরকারের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক কাঠামো লাভ করে। তাদের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করে। এবার জাতি উদ্যাপন করছে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পূর্তি। স্বাধীনতা দিবস সাধারণত উৎসবমুখর আবহে উদ্যাপিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপরই একাত্তরের হানাদারদের সহযোগী হিসেবে গণধিকৃত যুদ্ধাপরাধীদের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করে। জাতির প্রাণের দাবি ও সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে শুরু হওয়া এই বিচার-প্রক্রিয়ায় শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলছে। ইতিমধ্যে রায় কার্যকর হয়েছে কয়েকজনের। শিগগির আরো কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করাসহ বিচার শেষ করার প্রক্রিয়াও চলছে। তাই আজকের দিনটিতেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি স্বাধীনতার অগণিত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি দ্রুত সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ করা ও বিচারের চূড়ান্ত রায় কার্যকরের মাধ্যমে কলঙ্কমোচন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার থাকবে। একই সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বানও উচ্চারিত হবে। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের জনগণকে। আজ সরকারি ছুটির দিন। নানা আনুষ্ঠানিকতায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু। সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াও সব সড়ক ও সড়কদ্বীপ সাজানো হয়েছে জাতীয় পতাকা ও রঙিন পতাকায়। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে থাকছে আলোকসজ্জা। দিনটিতে মহান শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের পর্ব শুরু হয় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সূর্যোদয়ের সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে।
    দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন রাখা হয়েছে। হাসপাতাল, সরকারি শিশু সদন ও এতিমখানা দেওয়া হবে উন্নত খাবার। বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের কর্মসূচি নিয়েছে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। সারা দেশের স্মৃতিসৌধগুলোতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কুচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা সভা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দল ও সংগঠন এসব কর্মসূচি পালন করছে।
    সখীপুর উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের কর্মসূচি
    মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনে সখীপুর উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ মাঠে প্রত্যুষে এর শুভ সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ও ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। পরে পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, বাংলাদেশ স্কাউটস্, রোভার স্কাউটস্ গার্লস গাইড, কাবদল এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের অংশ গ্রহণে কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রদর্শন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত হাটার প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য সকল অতিথিদের জন্য ক্রীড়া অনুষ্ঠান। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। বাদ যোহর জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে ম,সজিদ, মন্দিও ও অন্যান্য উপাসানালয়ে বিশেষ প্রার্থনা। দুপুরে হাসপাতাল ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন।   বিকালে মহিলাদের ক্রীড়া অনুষ্ঠান। বিকেল ৪টায় প্রীতি ফুটবল খেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা একাদশের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান একাদশ মুখোমুখি হবে। সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শণ করা হবে। এ ছাড়াও সন্ধ্যায় ‘মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
Must Read
- Advertisement -spot_img
আরও সংবাদ
- Advertisement -spot_img