নাছিরুল ইসলাম: উৎসব মুখর পরিবেশে সারাদেশে উদযাপন করা হয়েছে মুসলমানদের বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা মানে কুরবানি দেওয়া। কুরবানি দেওয়ার জন্য ও আনুষাঙ্গিক কাজের প্রয়োজনে দা, ছুরি, চাপাতি, বটিসহ অন্যান্য উপকরণ বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। আর এসব যন্ত্রপাতি শান দেয়া, নতুন ভাবে তৈরি করার জন্য একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কামার। ঈদের পূর্বে কামার পাড়া জমজমাট থাকলেও এখন কামাররা অসল সময় কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সখীপুরের ছোট বড় সব হাটের সর্বত্রই এখন কামারদের অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে দা, ছুরি, চাকু, কুড়াল, চাপাতি, বটিসহ ধারালো বিভিন্ন সামগ্রী তৈরিতে নেই কোন ব্যাস্ততা। তবে এসব তৈরিতে আধুনিকতার ছোয়া লাগেনি এখনো। পুরনো নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়িয়ে লোহা থেকে ধারালো যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ। কামাররা জানান, এ পেশায় অধিক পরিশ্রম। আর শ্রম অনুযায়ী তারা এর যথাযথ মূল্য পান না। কারণ হিসেবে তারা জানান, বাজেটে রট বা লোহার কর বৃদ্ধি করায় লোহার বাজারদর অনেক বেশী। যদি নিত্যপন্যের মূল্যের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে যদি কামাররা তাদের লোহার ধারালো সামগ্রী তৈরি করতেন তাহলে এ পেশাজীবীরাও মূল্যায়ন পেতেন বলে মনেকরেন কামাররা। জীবিকা নির্বাহে কষ্ট হলেও শুধু পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাটিকে তারা এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন। সারা বছর পরিবারের সাংসারিক কাজে ও কৃষি জমিতে ব্যবহারের প্রয়োজনে খুব কম সংখ্যক ক্রেতারা এসে তা তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোরবানির পশুর জন্য বেশী প্রয়োজন হওয়ায় সবাই ছুটেছিলেন কামারদের কাছে। তবে কামারপাড়ায় আগের মত বিক্রি নেই।
সখীপুরের বাইটকা এলাকার শ্রী সুভাষ কর্মকার বলেন, ঈদে চাহিদা অনুযায়ী দিন-রাত মিলে ২০ থেকে ৩০ টি কাজে গড়ে প্রতিদিন একেক জন কামার খরচ বাদে প্রায় ১-২ হাজার টাকা আয় করেন। কিন্তু ঈদ পরবর্তী সময়ে মাত্র ৪-৫ শত টাকা আয় হয়। তিনি আরো জানান, একটি বড় দা ১ কেজি লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ ৭ শত টাকা, ১কেজি লোহার ১টি কুড়াল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা , বড় ছোরা ওজন অনুসারে ৩ থেকে ৬ শত টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে লোহা গ্রাহকের হলে সেক্ষেত্রে শুধু তৈরি ও শান বাবদ এসব সামগ্রীর প্রতি পিস ৫০ থেকে ২০০ টাকা গ্রহণ করা হয়। কামারদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলে জানা যায়, ঈদে যে বেচাকেনা হয় তা আর অন্য কোন সময় হয় না। ঈদের পরে তাদের বিক্রি একেবারে শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে।
চাপাতি কিনতে এসে চতল বাইদ গ্রামের মো. খলিলুর রহমান বলেন, কামারা প্রতিটা চাপাতির দাম আগের চেয়ে ১-২ শত টাকা বেশী কম নিচ্ছেন। কারণ এখন কামাদের কোন ব্যাস্ততা নেই।
শ্রী অপ্পু কর্মকার বলেন, সারা বছর আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকলেও এখন কোন ক্রেতা নেই বললেই চলে।আরেক কামার শ্রী রতন কর্মকার বলেন,কুরবানির ঈদের আগে অন্য হাটবাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে গড়ে ৩-৪ হাজার টাকা আয় হতো। কিন্তু কুরবানির ঈদের পরে লোহার অস্ত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রতিদিন ৩-৪ শত টাকা আয় হয়। ৩-৪ শত টাকা আয় করে আমাদের পারিবারিক খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।