সখীপুর পৌর শহরকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করার অঙ্গীকার ছিল প্রয়াত সংসদ সদস্য কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহানের। বর্তমান মেয়র সাহেবও কথা দিয়েছিলেন- এবার নির্বাচিত হলে পৌর শহরের চেহারা পাল্টে দিতে মাস্টারপ্লান বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার কিংবা মেয়র সখীপুরকে কতটা পাল্টে দিতে পেরেছেন তা বিচার করার দায়ভার সাধারণ মানুষের ওপরই না হয় থাকল। আমাদের নগরী পাহাড়ী অঞ্চল বলেই বেশি পরিচিত। এখনো পাহাড় সখীপুর বললেই মানুষ বেশি চিনে আমাদের প্রিয় সখীপুরকে। তারপরও সামান্য বৃষ্টি এলেই পৌর শহরের কিছু এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার যে ধারাবাহিক চিত্র বারবার ফিরে আসছে এর বিহিত কী? গত কয়েকবার টানা বৃষ্টির কারণে সখীপুরের কিছু অংশের বাসা-বাড়িতে জলাবদ্ধতার চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। কোনো কোনো বাসায় ঘরের ভেতর হাঁটু বা কোমর সমান পানি প্রবেশ করেছে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়েছে বলে মনে করি।
পানির কারণে যাদেরকে কোমর পর্যন্ত পানিতে বাইরে বের হতে হয়েছে তাদের দুর্ভোগের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। মেয়রের সব উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর সাধারণ মানুষের ভরসা থাকলেও এসব চিত্র তাদের হতাশ হতে বাধ্য করে। আমাদের সখীপুরকে সব সময়ই কবি, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সবাই সবুজ নগরীর তালিকায় শীর্ষে জায়গা দেন। এছাড়াও এটি ভবিষ্যতের সুন্দর একটি শহর হবে বলে ভবিষ্যতবাণী করেন। তাদের পর্যবেক্ষণ যে ভুল প্রমানিত হবে দিন দিন তা যেনো খুব বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সখীপুরে জলাবদ্ধতার মূল কারণ কী তা দায়িত্বশীল কারো অজানা নয়। তা সত্ত্বেও তা প্রতিকারের চেষ্টা তো করা হচ্ছেই না বরং অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার নতুন নতুন কারণও সংযোজিত হচ্ছে। প্রিয় মেয়র মহোদয়, নগরীর জলাবদ্ধতার কারণ নিয়ে একবারও ভেবেছেন কি? এই পাহাড়ী অঞ্চলের একটি পৌরসভার জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকলে বাইরের মানুষ কি ভাববেন? দয়াকরে একবার ভেবে দেখবেন।
পৌর শহরের আনাচে-কানাচে রাস্তা সরু করে এখনো সমানতালে অপরিকল্পিতভাবে বাসা বাড়ি তৈরি হচ্ছে। যেনো দেখার কেউ নেই। আগুন লাগলে এসব সড়ক দিয়ে ফায়ার সার্ভিস প্রবেশ করবে কিনা তার যেনো কোনো খেয়াল নেই বাসার মালিক পক্ষের। নিশ্চয় একদিন খেয়াল করবেন। তবে তখন হয়তো সময় থাকবেনা কারো হাতে। তাই এখনই সময় আমাদের সখীপুরকে সাজানোর। বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণের। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার। একনই সময় স্বপ্নকে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার…।
কীভাবে এমন পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ পাওয়া সম্ভব সে বিষয়ে পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ না নিয়ে ‘বৃষ্টির পানি কোথাও জমে থাকছে না, ধীরে হলেও নেমে যাচ্ছে- এমন ভাবনায় যারা আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন। তাদের মনে রাখা জরুরি যে, এটাই শেষ নয় আগামীতেও এমন বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। এখনই উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি এর চেয়েও নাজুক হতে পারে নয়; নাজুক হতে বাধ্য।
প্রকৃতির খেয়ালে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটবেই। তার মানে এই নয় যে, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাগরিক দুর্ভোগও চরমে উঠবে। সরকার চেষ্টা করছে না এমন কথা বলা যাবে না। তবে যারা সখীপুরকে তিলোত্তমা শহর করার নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন তাদের পরিকল্পনা এবং বাস্তবতায় বিস্তর ফারাক থাকায় কোনো পদক্ষেপই কার্যকর ফল বয়ে আনছে না। কিন্তু এ ধরনের সমস্যা এভাবে জিইয়ে রাখা মানে অন্য সব অর্জনকে বিনষ্ট করা। সুতরাং এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের আরো আন্তরিক হতে হবে বলে মনে করি।
লেখক: সাইফুল ইসলাম সানি, সাংবাদিক, দৈনিক মানবজমিন।