জার্মানি পরিবর্তন এনেছে খেলায়। ব্রাজিলকে ভাবতে হবে ডিফেন্স ও মধ্যমাঠ নিয়ে। আর্জেন্টিনাকে মেসি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফল যাই হোক জিতেছে আইসল্যান্ড। ফেভারিটরা পড়ছে ঝুঁকিতে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে পারে প্রযুক্তির ব্যবহার। রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করে এসব মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক।
তিনি বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী এবারের বিশ্বকাপ শুরু করতে পারেনি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। কিন্তু জার্মানি-মেক্সিকোর ম্যাচটি ছিল এ বিশ্বকাপের অন্যতম উপভোগ্য। তারা পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবে। জার্মানি ঐতিহ্যগতভাবে পাওয়ার ফুটবল খেললেও এবার তাদের খেলায় দেখা গেছে পরিবর্তন। জার্মানি ছোট পাসের যে খেলা উপহার দিয়েছে তার নেপথ্যে ভূমিকা রয়েছে বায়ার্ন মিউনিখের কোচ পেপ গার্দিওলার। জার্মানির এ দলে বায়ার্নের বেশ কয়েকজন ফুটবলার খেলছে। অন্যদিকে মেক্সিকো প্লেসিং ফুটবল খেলেছে। জার্মানিকে স্পেসই দেয়নি। কৌশলী ফুটবল খেলেই ম্যাচটি জিতেছে মেক্সিকো।
আমিনুল বলেন, জার্মানির বিপক্ষে গত বিশ্বকাপে যে বিপর্যয় ঘটেছিল তার থেকে বেরিয়ে আসতে বাছাইপর্ব ও প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে অসাধারণ খেলেছে ব্রাজিল। রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট এ দলটির শুরুটাও ছিল ভালো। কুটিনহো অসাধারণ গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু সে পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেনি। ব্রাজিলকে ডিফেন্স ও মধ্যমাঠ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ব্রাজিল দলের মিরান্ডার মতো খেলোয়াড়ের কাছে এত ভুল অপ্রত্যাশিত। মধ্যমাঠও বল ধরে রেখে আক্রমণভাগকে জোগান দিতে পারেনি। ব্রাজিলের আক্রমণভাগ নিঃসন্দেহে এ বিশ্বকাপের সেরা। কিন্তু নেইমারকে তো বিগত দুই দশকের মধ্যে একম্যাচে সবচেয়ে বেশি ফাউল করেছে সেদিন। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ড কমপেক্ট ফুটবল খেলেছে প্রথম ম্যাচে।
আমিনুল বলেন, রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা এসেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কিন্তু তারপরও দলটি আর্জেন্টিনা, তাদের দলে আছে মেসির মতো অনন্যসাধারণ ফুটবলার। এবার আর্জেন্টিনারও শুরুটা হয়নি প্রত্যাশিত। তারা গোটা বিশ্বব্যাপী বিপুল সংখ্যক সমর্থককে হতাশ করেছে। আর্জেন্টিনাকে মেসি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইসল্যান্ডের প্লেয়াররা যখন মেসিকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছে তখন দলটির আক্রমণভাগ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। অন্যদিকে আইসল্যান্ড ব্যালেন্স দল, টিমওয়ার্কই তাদের শক্তি। শারীরিক উচ্চতাও তাদের দিয়েছে অতিরিক্ত সুবিধা। ম্যাচের ফলাফল যাই হোক, আমার দৃষ্টিতে সেদিন জিতেছে আইসল্যান্ড। কারণ তারা যেমনটি খেলতে চেয়েছিল, তেমনটিই খেলেছে। আমিনুল বলেন, জার্মানির ম্যানুয়েল নয়্যার ও স্পেনের ডেভিড ডি গেয়ার মতো গোলকিপারও ভুল করে। ক্রিস্টিয়ানোর দ্বিতীয় গোলে ডেভিড গেয়ার ভুলটি চোখে পড়ে। অন্যদিকে নয়্যার যে গোলটি হজম করেছে ফুটবলের ভাষায় তার নাম ফাস্টপুল গোল। সেখানে ডিফেন্ডার ও নয়্যারের যৌথভুলে গোলটি হজম করেছে জার্মানি। কিন্তু মন কেড়েছে আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক হ্যানদরসেন, দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক জো ও মেক্সিকোর ওচোয়ার কিপিং।
নিজের সময়ে এশিয়ার অন্যতম সেরা গোলরক্ষক আমিনুলের বিচারে ফ্রিকিক থেকেই এসেছে বর্তমান বিশ্বকাপের সবচেয়ে সুন্দর দুইটি গোল। প্রথমটি কোস্টারিকার বিপক্ষে সার্বিয়ার জোহান ভেনেগাস ও দ্বিতীয়টি স্পেনের বিপক্ষে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো করেছেন। প্রযুক্তির ব্যবহারটিই রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক এ অধিনায়ক। তিনি বলেন, এ বিশ্বকাপে প্রচুর পেনাল্টি হচ্ছে। আর পেনাল্টির নেপথ্যে রয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। এতে এক দেশ লাভবান এবং অন্য দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বকাপ শেষে এটাই প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ফেভারিটরা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে বলে মনে করেন আমিনুল হক। তিনি বলেন, প্রথমপর্বে ১৪টি ম্যাচ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছি ফেভারিটরা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো দলগুলো এখন আর স্বস্তিতে নেই। বিশ্বকাপের প্রথমপর্বেই তাই কোটি কোটি দর্শকের হৃদয় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
অনুলিখন: কাফি কামাল । [মানবজমিন থেকে নেয়া]