নিজস্ব প্রতিবেদক: সখীপুরে দুই অসহায় নারী অবশেষে ইউএনওর হস্তক্ষেপে নিজ বাড়িতে ফিরেছে। ওই দুই নারী শুক্রবার থেকে তাঁদের নিজ বাড়িতেই কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। কোয়ারেন্টিনে থাকার সব খরচ ইউএনও আসমাউল হুসনা লিজা ওই বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।
জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল উপজেলার বাঘেরবাড়ী গ্রামের মৃত রজব আলীর ছেলে জাহিদ হাসান (১৮) রাজধানীর কুয়েক মৈত্রী হাসপাতালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে জাহিদ মারা গেছে এ খবরটি গ্রামে পৌঁছালে-গ্রামবাসী করোনা সন্দেহে লাশ আনতে বাধা দেন। পরে জাহিদের মা ও বোন বাধ্য হয়ে ওই লাশ আন্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে দাফনের জন্য হস্তান্তর করেন। এরপর ৩ এপ্রিল বিকেলে জাহিদের মা ও বোন সখীপুরের নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকার শর্তে ঢাকা থেকে আসতে চাইলে গ্রামবাসী এতেও বাধা দেয়। পরে স্থানীয় প্রশাসন ওই দুই নারীকে গ্রামের বাড়িতে না পাঠিয়ে সরাসরি আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুস সোবহান জানান, গত রোববার সকালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা দুই নারীর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার আইইসিডিআরে পাঠানো হয়েছিল। এতে ওই দুই নারীর মধ্যে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরে বুধবার রাতেই ওই দুই নারীকে গ্রামের বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার শর্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নিহত জাহিদের বোন শিরিনা আক্তার জানান, আইসোলেশনের ছাড়পত্র নিয়ে বুধবার রাতে আমাদের বাড়িতে পৌঁছালে আমার চাচাতোভাই মাসুদ আমাদেরকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য বলেন। পরে ওই চাচাতোভাই বাড়িতে থাকা একটি যৌথ নলকূপ ও শৌচাগারে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে বাধ্য হয়েই পরের দিন সকালে সখীপুর এসে এক ভাড়া বাসায় উঠি। পরে বিষয়টি ইউএনওকে জানাই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, ‘ওই দুই নারী নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে চাইলেও তাঁদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। নলকূপ ও শৌচাগারে তালা দেওয়া হয়। পরে আমি পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ওই দুই নারীকে তাঁদের নিজ বাড়িতে তুলে দিয়ে ও দুই সপ্তাহের খাবারের ব্যবস্থা করে এসেছি।’
চাচাতোভাই মাসুদ রানা বলেন, বাড়িতে মাত্র একটি করে নলকূপ ও শৌচাগার। ওদের করোনাভাইরাস থাকার সম্ভবনা রয়েছে। একই নলকূপ ও শৌচাগারে ঝুঁকি রয়েছে। ইউএনওর অনুরোধে ওদেরকে আমাদের নলকূপ ও শৌচাগার ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে আমাদের নিরাপত্তার জন্য পাশে নানার বাড়িতে রয়েছি। ওই দুই নারী বলেন, সখীপুরের ইউএনও ম্যাডাম একজন মমতাময়ী। তাঁর কারণে আমরা আমাদের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছি। তিনি আমাদের আরও ১৫দিনের খাবারের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। ওই ম্যাডামের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ।