পু‌লিশ ও স্বেচ্ছাসেবী‌দের সহ‌যো‌গিতায় অন্তঃস্বত্তা সম্পা’র ঠাঁই হল হাসপাতা‌লে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২৬ বছর বয়সের মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটির সম্পা। ছোটবেলায় মারা গেছে বাবা। জীবিকার তাগিদে অন্যের বাড়ি ঘুরে ঘুরে কাজ করে দরিদ্র মা। ছেড়া ও নোংরা কাপড় পড়েই সারা দিন ঘোরাফেরা করে সম্পা। আট-দশ বছর বয়স থেকেই সে ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন হাটবাজারে। কেউ টাকা বা খাবার দিলে খায়, না দিলে অনাহারেই কাটে তার দিন। ইচ্ছে হলে মায়ের কাছে যায়, না হলে যেখানে রাত সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে এই  সম্পা।
অযত্ন-অবহেলায় বেড়ে উঠা মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটি এখন গর্ভবতী। গর্ভধারণের ৩২ সপ্তাহ চলছে। কিন্তু সে জানে না কে তার সন্তানের বাবা। পিতৃপরিচয় না থাকায় কেউ তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসেনি। এর মধ্যে ভালো খাবারও জোটেনি তার। যে কারণে পুষ্টিহীন ও দুর্বল হয়ে পড়ে গর্ভবতী সম্পা। কেউ তাকে সাহায্য করেনি লোক নিন্দার ভয়ে। বুধবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। অতঃপর পুলিশ তার নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করে। সম্পার বাড়ি সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের গড়বাড়ি এলাকার বারমুন্ডুলিয়া গ্রামে। বাবা মৃত পাঞ্জু মিয়া। মায়ের নাম শহর বানু। ওই রাতেই সম্পা ও তার মাকে খুঁজে বের করেন সখীপুর থানার পুলিশ। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তাকে উন্নত চিকিৎসা ও মেডিকেল চেকআপ করেন ডাক্তার। মা হিসেবে তার শারিরীক অবস্থা নাজুক থাকায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ডাক্তারের পরামর্শে সখীপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উৎসর্গ ফাউন্ডেশন’ গর্ভবতীর জন্য রক্তের ব্যবস্থা করে। বিভিন্নভাবে ওই ফাউন্ডেশনের ৭/৮ জনের একটি সদস্য দল সম্পাকে সহযোগিতা করছে।
ওই রাতেই নতুন জামা-কাপড়, জুতা, সাবানসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে হাসপাতালে আসেন সখীপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন। এ সময় সখীপুর থানার পুলিশ পরির্দশক (তদন্ত) এ.এইচ.এম লুৎফুল কবির, সখীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাকিল আনোয়ার, উৎসর্গ ফাউন্ডেশনের সভাপতি নাফিস হাসান রুজ, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল সিকদারসহ ৭/৮ জনের একটি সদস্য দল উপস্থিত হন। মো. আমির হোসেন বলেন, বিষয়টি নিতান্তই মানবিক। মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে ওই মানুষিক ভারসাম্যহীন গর্ভবতীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার ব্যবস্থা করি। হাসপাতালকে বলেছি, মেডিকেল চেকআপ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিন। এছাড়া আমি নিজেই ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে খোঁজখবর নিচ্ছি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বলেছি, টাকার প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আর.এম.ও) ডা. শাহীনুর আলম বলেন, ওর চিকিৎসা না হলে শাররীকভাবে দুর্বল ও রুগ্ন হয়ে পড়ত। ওর সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে বাচ্চা হওয়ার আগ পর্যন্ত ওকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার ব্যবস্থা করছি।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের পাশে চুপচাপ বসে আছেন মা শহর বানু।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি সম্পা মানসিক ভারসাম্যহীন। কোনোভাবেই তাকে বাড়িতে রাখা যেতো না। শহর বানু এই ভারসাম্যহীন মেয়েকে নিয়ে এসে বারমুন্ডুলিয়া গ্রামে বিয়ে করেন। পূর্বের ও পরের কোন বাবাই আর জীবিত নেই। কোনোমত থাকার একটি ঘর আছে।
উৎসর্গ ফাউন্ডেশনের সভাপতি নাফিস হাসান রুজ বলেন, আমরা সাত/আট জনের একটি সদস্য দল এই বোনটির পাশে আছি। আগামী দিনেও ওর পাশে থাকবো।

Author: Ismail Hossain

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *