নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আজ সখীপুরে চার ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আছে শঙ্কাও! বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। চারটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরাও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন; চারটিতেই বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
অন্যদিকে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় চার ইউনিয়নের ৫ জনকে আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গত ৩ নভেম্বর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনের আচরণবিধি সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইউএনও চিত্রা শিকারীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি। এছাড়াও মতবিনিময় সভায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার, র্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার আবদুল্লাহ আল-মামুন, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা এএইচএম কামরুল হাসান, রিটার্নিং ও নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতাউল হক, মনসুর আহমেদ, প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল গফুর প্রমুখ বক্তব্য দেন। এছাড়াও এসিল্যান্ড হা-মীম তাবাসসুম প্রভা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত শিকদার, পৌরমেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ আজাদ, সখীপুর বার্তার সম্পাদক শাকিল আনোয়ার, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত লতিফ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন হায়দার, এনামুল হক, যুগ্ম সাদারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সানিসহ গণমাধ্যম কর্মীরা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনীত দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিদ্রোহীরা প্রার্থীরাও পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রাখেন। তবে আশার কথা হচ্ছে; প্রধান অতিথি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি ও পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার চারটি ইউপিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করে বক্তব্য দেন। এতে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
ওই মতবিনিময় সভায় কাঁকড়াজান ইউনিয়নের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. দুলাল হোসেন, দলীয় প্রার্থী তারিকুল ইসলাম, বহেড়াতৈল ইউনিয়নের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী গোলাম ফেরদৌস, দলীয় প্রার্থী ওয়াদুদ হোসেন, যাদবপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী খন্দকার বজলুর রহমান বাবুল, দলীয় প্রার্থী একেএম আতিকুর রহমান এবং বহুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া সেলিম, বিদ্রোহী প্রার্থীরা (স্বতন্ত্র) সরকার মোহাম্মদ নূরে আলম মুক্তা ও নিরঞ্জন বিশ্বাস পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রাখেন।
এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল অংশ নেয়নি। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয় অনেকটা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বিদ্রোহীরা থাকায় ইউনিয়নগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আভাস মিলছে। এ ছাড়া বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে সরানোর জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় চাপ থাকলেও তাদের সরানো যায়নি। এ সুযোগে বিভিন্ন ইউপিতে বিদ্রোহীরা দাপটের সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। কাকড়াজান, বহেড়াতৈল, যাদবপুর ও বহুরিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে নিজ দলের বিদ্রোহীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চারটি ইউপিতেই বিদ্রোহী থাকায় দলীয় প্রার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। তবে তাঁরা দলীয় ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের কমর্ী-সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নেওয়া দলীয় ‘বিদ্রোহী’রাও নিজেদের মতো করে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে ভোটারদের মন জয়ে কাজ করছেন। এছাড়াও দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
ব্যাপকভাবে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রার্থীরা যার যার অবস্থান থেকে কর্মী-সমর্থক নিয়ে ভোটের মাঠ সরগরম করে তুলেছেন। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা নির্বাচনী এলাকা। সকাল থেকে রাত অবধি ভোটারদের পেছনে ছুটে চলেছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা-সমর্থকরা। প্রত্যেক প্রার্থীরই রয়েছে একাধিক নির্বাচনী কার্যালয়। প্রতিদিনই দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা যুক্ত হচ্ছেন। ভোট প্রার্থনায় প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। আর প্রাথর্ীদের যেনো দম ফেলার সময় নেই। দারণ ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। সভা-সমাবেশে, শোডাউন, উঠান বৈঠক করে তারা প্রচারণায় মেতে রয়েছেন। প্রচারণার মাইকিং যেনো কান জ্বালাপালা করে তুলেছে। সব মিলিয়ে প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে রয়েছে।
এদিকে, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। চারটি ইউপিতে বইছে উৎসবের আমেজ। চেয়ারম্যান প্রাথীদের পাশাপাশি চলছে সংরক্ষিত নারী ও সাধারণ সদস্য পদের প্রার্থীদের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা। সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে প্রচার-প্রচারণা। দলীয় ও বিদ্রোহী প্রাথর্ীরা কমর্ী-সমর্থক নিয়ে ভোটারদের মন জয়ের সর্বশেষ চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে পড়ে লেগেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চারটি ইউনিয়নে নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত দেখা দিয়েছে। দলের উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বহু নেতারাও বিদ্রোহী প্রাথর্ীদের পক্ষে প্রকাশ্যে না থাকলেও পরোক্ষভাবে সমর্থন রয়েছে তাদের। দলীয় প্রাথর্ীর নির্বাচনী সভা-সমাবেশ মিটিংয়ে উপস্থিত থাকলেও প্রকৃত পক্ষে বিদ্রোহীদের পক্ষেই রয়েছে তাদের পূর্ণ সমর্থন। এদিকে; চার ইউপিতে বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্র অতি ঝঁুকিপূর্ণ ও ঝঁুকিপুর্ণ হিসেবে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ওই সব ভোট কেন্দ্রগুলোর বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চিত্রা শিকারী বলেছেন, এবার উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের প্রাথর্ীকে ভোট দিতে পারে এ জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও নির্বাচনের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
Leave a Reply